গান্ধীজি ও তার চরকা নীতি ড. চঞ্চল কুমার মণ্ডল
গান্ধীজি ও তার চরকা নীতি
ড. চঞ্চল কুমার মণ্ডল
বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ জননায়ক হলেন - মােহনদাস করমচাদ গান্ধী। স্বদেশী আন্দোলনের অন্যতম এক ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক চিন্তানায়ক হিসেবে তিনি আরও পৃথিবীর ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। এই উজ্জ্বলতম স্বদেশচেতা ব্যক্তিত্বের জন্মঃ ২রা অক্টোবর ১৮৯৬ এবং মৃত্যু: ৩০ শে জানুয়ারী ১৯৪৮-এ।
স্বদেশী আন্দোলনেরকালে ভারতীয় বিপ্লবীগণ যখন ‘সহিংস’ বিপ্লবের পথ মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন;ঠিক সেই সময় এই মহান উদার স্বদেশ চেতনা সম্পন্ন ব্যক্তিত্বের মানুষটি স্বদেশবাসীকে ‘অহিংসার’ পথে দীক্ষা দিতে তৎপর হলেন। কারন, তিনি দেখলেন সমগ্র ভারতবর্ষের নর-নারীগণ জাতি-ধর্ম-বর্ণের বিদ্বেষে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে পড়েছে। এই অনৈক্যের সুযােগে বিদেশী শাসকগণ সদন্তে ভারতবাসীদের শাসনের রক্তচক্ষুতে দাপিয়ে রাখতে পেরেছে। আবার ভারতীয় উচ্চবিত্ত অভিজাত সম্প্রদায়ের নেতৃত্বগণ বৃহত্তর জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। ইংরেজ শাসকগণও ‘বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে হিন্দু মুসলমান ঐক্যে ফাটল ধরাতে তৎপর হলেন। এমন পরিস্থিতিতে গান্ধীজি 'অহিংস বিপ্লবের পথে মুক্তির সন্ধান করার আহ্বান জানালেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি স্বদেশ বাসীদের আগে স্বনির্ভর করে তুলতে চাইলেন। বিদেশি দ্রব্য বর্জন করে স্বদেশী দ্রব্য গ্রহণ করার দীক্ষা দিতে তৎপর হলেনার 'চরকা’ নীতির মধ্য দিয়ে। নিজ হাতে চরকায় কাটা সুতাের তৈরী বস্ত্র পরিধানের আহ্বান জানালেন স্বদেশবাসীদের। গান্ধীজির এই চরকা’ নীতির গভীর তাৎপর্য যাঁরা বুঝতে পারেননি, তারা বিরােধিতা করেন।
কিন্তু তিনিঐ‘চরকা' নীতিরমধ্য দিয়ে স্বদেশবাসীদের আত্মত্যাগও আত্মশুদ্ধির পথ দেখান। স্বরাজের জন্য স্বদেশবাসীকে শ্রমযােগী, কর্মযােগী করে তুলতে চেয়েছিলেন ঐ ‘চরকা’ নীতির মধ্য দিয়ে। স্বদেশবাসীর আত্মশক্তি জাগরণ ও ঐক্য চেতনার মূলমন্ত্র হল ঐ ‘চরকা’ নীতি। বঙ্গে গােহত্যা নিষেধ, মদ্য পান সহ হরিজন আন্দোলনের মতাে অসংখ্য শ্রেষ্ঠ সমাজ সংস্কর্তা ও ভারতীয় মুক্তি আন্দোলনের অহিংসবাদী ঐ ‘চরকা' নীতির জনক তথা স্বাধীন ভারতের জাতির জনক হিসেবে তিনি সবার পূজাপাদ হয়ে ওঠেন। টাকার নােটের মধ্যে বন্দী এই আদর্শ মহাপুরুষের ছবি আজও জ্বলজ্বল করে।