অতীন্দ্রিয় জগৎ-পথের পথিক কবি রবীন্দ্রনাথ -ড. চঞ্চল কুমার মণ্ডল

 

অতীন্দ্রিয় জগৎ-পথের পথিক কবি রবীন্দ্রনাথ


প্রত্যেক কবি-শিল্পীগণ লৌকিক জগৎ ছাড়িয়ে লোকোত্তর জগৎ পথে, অতীন্দ্রিয় জগতে বিচরণ করতে ভালোবাসেন। সেই অতীন্দ্রিয় জগৎ পথের সন্ধানে ‘পথ’ সম্পর্কে তাই বৈষ্ণব কবি বলেছেন –

“ঘর যাইতে ‘পথ’ মোর

হইল অফুরান।”

সাহিত্য-সাধক গণ অতীন্দ্রিয় জগৎপথের সন্ধানে পাড়ি জমিয়েছেন। যে জগৎ লৌকিক জগৎ ছাড়িয়ে অলৌকিকের ‘পথ’ ধরে এগিয়ে গেছে। রাধা-কৃষ্ণ প্রেম গীতিকায় কৃষ্ণ প্রেমে বিমোহিতা আরাধিকা শ্রীরাধিকার প্রিয়ের উদ্দেশ্যে কঠোর কৃচ্ছ্রসাধনায় কণ্টকময় ‘পথে’র যে অভিসার যাত্রা, সেও তো এক অতীন্দ্রিয় জগৎ পথে ভগবৎ অন্বেষার যাত্রা। গোকুল যাত্রার ‘পথে’ গোপ-বালিকাদের যে একটা দীর্ঘ ‘পথ’ জার্নির ছবি চণ্ডীদাস এঁকেছেন, সে তো মথুরার ‘পথ’ ধরে শ্রীরাধিকার মাধুর্য লীলা থেকে ঐশ্বর্যলীলা ‘পথে’ তথা, অতীন্দ্রিয় জগৎ পথে যাত্রা। ঐ অতীন্দ্রিয় জগৎ পথ লোকজগৎ পথের থেকে বহু দূরে। যে ‘পথে’ এগিয়ে যেতে গেলে কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন প্রয়োজন। তাই বৈষ্ণব কবি এও বলেছেন, -

“মন্দির বাহির কঠিন কপাট

চলইতে শঙ্কিল পঙ্কিল বাট।”

এখানে ‘বাট’ অর্থে, সেই ‘পথ’। যে পথ ঐ অতীন্দ্রিয় জগৎ পথ।

এই সাধনার পথে, পথিক কবি রবীন্দ্রনাথ তো আজীবন বিচরণ করেছেন জগৎ জীবনকে জানবার আশায়। রবীন্দ্রনাথের কাব্য জীবনের সাধনা তো পরিপূর্ণ একটা জীবন ‘পথে’রই সাধনা। তাই তো, কবি বার-বার ছুটে গেছেন লৌকিক জগৎ থেকে এক অতীন্দ্রিয় জগৎ ‘পথে’। কবি জীবনে তাঁর কৈশোরের ‘পথ’ ছিল দুরন্ত-চঞ্চলতায় ভরা। আবার, যৌবনের উন্মেষে দেখা যায়। সেই কবি ভাবনার বিকাশ ‘পথ’ অনিশ্চিত বিরহের উন্মাদনায় গিয়েছে ভরে। সেই যৌবন-মধ্যাহ্নে কবির ভাব-হৃদয় ‘পথ’, তীব্র প্রেম ও সৌন্দর্যানুভূতির মধ্য দিয়ে হেঁটে গেছে। বিশ শতকের দোর গোড়ায় যৌবন-মধ্যাহ্নের ‘পথ’ পরিক্রমায় কবি-হৃদয়ের ভাবনা আবার ভোগ ও বিলাসের প্রাচুর্যতায় পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। যৌবন ‘পথ’ পরিক্রমা শেষে, সায়াহ্নে এসে কবি-হৃদয় ভোগ-বিরতির ‘পথ’ ধরে  প্রবাহিত। এবং তার পরিণতি আধ্যাত্মিক আকুলতার ‘পথে’। কবির সেই জীবন-সায়াহ্নের ‘পথ’ আধ্যাত্মিক আকুলতায় ভরা। কবি-হৃদয় ভগবৎ উপলব্ধির পরিপূর্ণতায় জীবন-সায়াহ্নে উপনীতকিন্তু, কবি হৃদয়ের অতীন্দ্রিয় জগৎ ‘পথে’-র উপলব্ধির প্রতিটি স্তরের এই যে জার্নি ‘পথ’, এই ‘পথে’ কবির চলারও নেই শেষ। কবির অন্তরের ‘পথে’ যাত্রা, অসীমের উদ্দেশ্যে নিরুদ্দেশের ‘পথে’ অতীন্দ্রিয় জগৎ ‘পথে’ যাত্রা। বিশ শতকে ‘বলাকা’ (১৯১৬) পর্বে এসে যৌবনের উচ্ছলতায় কবির যে ‘পথ’ চলার দুর্বার গতি তা, পা’য়ে-পা’য়ে চঞ্চলতায় ভরা। কিন্তু, কবি যে অতীন্দ্রিয় জগৎ পথে পাড়ি জমানোর দুর্বার আকাঙ্ক্ষায় পা’য়ে-পা’য়ে ‘পথ’ চলার নেশা জমেছে; এই ‘পথ’ চলার কি তিনি কখনো শেষ চেয়ে ছিলেন? তাঁর কবি হৃদয়ের পরিপূর্ণতার ‘পথ’ তথা, অতীন্দ্রিয় জগৎ ‘পথ’ সত্যিই কি কবিকে তৃপ্তি দিয়েছে? কবি হিসেবে তাঁর চলার ‘পথ’ তো চির-চঞ্চল গতি। তিনি তো চলার ‘পথে’র চির-পথিক। জীবনকে স্বাদে-গন্ধে, সুখে-দুঃখে চেটে-পুটে নানান ভাবে পরখ করে দেখার চেষ্টা করেছেন তিনি। তাঁর কাব্য সাধনার ‘পথ’ হল একটা পরিপূর্ণ জীবন সাধনার উপলব্ধির চিরন্তন রাজপথ। ভগবৎ উপলব্ধির ‘পথে’ ‘গীতিমাল্যে’ এসে শান্তি ও তৃপ্তি দেখা গেলেও; চির-গতির প্রার্থনায় অতৃপ্তির আকাঙ্ক্ষা ‘পথে’ প্রার্থনা করেছেন –

“আরও আরও আলো, আরও আরও আরও দাও প্রাণ।”

কবির কাব্য-হৃদয় অসীমের ‘পথে’ অতীন্দ্রিয় জগৎ ‘পথে’ বার-বার পাড়ি জমিয়েছে। ‘সীমা’র ‘পথ’ কবিকে কখনোই বেঁধে রাখতে পারেনি। তাঁর কবি মন শুধু এই ভরসায় পাড়ি জমিয়েছে অসীমের উদ্দেশ্যে যে, -

“পথ আমারে পথ দেখাবে

এই জেনেছি সার।”

এই ভরসাতেই কবি অতীন্দ্রিয় জগৎ ‘পথে’ পাড়ি জমিয়েছেন। ‘মুক্তধারা’র গানে ধনঞ্জয় বৈরাগীর মুখ দিয়ে কবি সেই দুঃসাহসের সঙ্গে জীবন ‘পথে’ পাড়ি জমিয়ে বলেছেন –

“পথ আমারে সেই দেখাবে

যে আমারে চায়

আমি অভয় মনে ছাড়ব তরী

এই শুধু মোর দায়।”

রবীন্দ্রনাথের গানে, নাটকে-কবিতায় এভাবে ‘পথ’ ভাবনা বার-বার ঘুরে ফিরে এসেছে। কারণ, তিনি চির-পথিক হিসেবে অনন্তের পথে যাত্রা করতে চেয়েছেন। অসীমের ‘পথ’ কবিকে বার-বার দিয়েছে হাতছানি। সীমার ‘পথ’ ঐ অসীমের ‘পথে’ ধাবিত হয়েছে। তাই তিনি অতীন্দ্রিয় জগৎ পথের বিচরণে জীবনকে আনন্দরসে সঞ্জীবিত করে তুলে বলেছেন –

“আমি পথিক, পথ আমারি সাথী।

...       ...       ...

যত আশা পথের আশা

পথে যেতেই ভালোবাসা,

পথে চলার নিত্যরসে

দিনে দিনে জীবন ওঠে মাতি।”

আসলে, জগৎ ও জীবনকে জানবার আশায় কবির অতীন্দ্রিয় জগৎ পথে চির যাত্রা। অতীন্দ্রিয় জগৎ পথের পথিক হিসেবে কখনোই চাননি এই চলার ‘পথ’ কভু ফুরিয়া যাক্‌। ‘পথ’ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নইলে কবি বলবেন কেন –

“পথে পথেই বাসা বাঁধি,

মনে ভাবি পথ ফুরালো।”

আর তাই, ‘পথ’ চলাই ‘পান্থজনের সখা’ হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করে কবি বলেছেন –

“পান্থ তুমি, পান্থজনের সখা হে,

পথে চলাই সেই তো তোমার পাওয়া।”

শুধু তাই নয়; কবি চিরন্তনের ‘পথ’ চলার পথিক হিসেবে বলেছেন, -

“জীবন রথের হে সারথি,

আমি নিত্য পথের পথি,

পথে চলার লহ নমস্কার।”

আর ‘পথ’ চলায় অসীমের মাঝেই সীমাকে বাঁধতে চেয়েছেন কবি।

          কোনো বন্ধনই কবিকে বেশি দিন বেঁধে রাখতে পারেনি। বার-বার তিনি এক অতীন্দ্রিয় জগৎ ‘পথে’ পাড়ি জমিয়েছেন কোন্‌ সে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায়? কবির নিজের মনেও সেই একই প্রশ্ন জেগেছে –

“দীর্ঘ পথ ভালো মন্দে বিকীর্ণ,

রাত্রি দিনের যাত্রা দুঃখ-সুখের বন্ধুর পথে

শুধু কেবল পথ চলাতেই কি এ-পথের লক্ষ্য?”১০

এর উত্তরও কবি ‘পত্রপুট’ কাব্যে দিয়েছেন –

“জীবনের পথে মানুষ যাত্রা করে

নিজেকে খুঁজে পাবার জন্যে।”১১

‘পথে’র সঙ্গেই কবির সখ্যতা। অনন্ত-অসীম, অতীন্দ্রিয় জগৎ পথে যাত্রার উদ্দেশ্যে কবি ‘পথ’কেই জীবনের চলার অঙ্গ করে নিয়েছেন। ‘পথ’ কেটে নতুন ‘পথ’ বের করার আধ্যাত্মময় কাব্য সাধনায় কবির ঐ অতীন্দ্রিয় জগৎ পথে কেবল বিচরণ করা। তিনি চির ‘পথে’র পথিক কবি। অতীন্দ্রিয় জগৎ পথেই কবির জীবনসাধনা, কাব্যসাধনাযে পথের চিরযাত্রী হিসেবে কবির কাঙ্ক্ষিত ঘোষণা–

“যাত্রী আমি ওরে

কোন্‌ দিনান্তে পৌঁছাব কোন ঘরে।”১২

          এই ‘ঘর পথ’ ঈশ্বর সাধনার পথ। ভগবৎ উপলব্ধিময় জীবন অন্বেষার ‘পথ’। যে ‘পথে’ অতীন্দ্রিয় জগতে বিচরণ করে মৃত্যুকে পা’য়ে মাড়িয়ে কবি লাভ করেন মৃত্যুঞ্জয়ী অমরত্বের মহিমা। আমরা সেই আস্বাদে আহ্লাদিত। সর্বনাশের ‘পথ’ মাঝে বসে ও কবি তাই পুষ্পের হাসি হাসতে পেরেছেন। দেহ-সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে পরম কল্যাণময় ঈশ্বরের আরাধনায় রানী সুদর্শনার (‘রাজা’ নাটক) মধ্য দিয়ে আরাধিকা রাধিকার মতো কবি ধুলোর পথে নেমেছেন। কারণ, কবির দৃষ্টিতে ঐ ‘ঘর পথ’ই সবচাইতে কণ্টকাকীর্ণ, দুর্গম-কঠিনতম ‘পথ’সহজ সরল ‘পথ’ বলতে একমাত্র ঐ বাইরের ‘পথ’। কবি তাই ‘শেষ হিসাব’ কবিতায় বলেছেন –

“দুর্গম পথ ছিল ঘরেই

বাইরে বিরাট পথ –

তেপান্তরের পথ কোথা-বা,

কোথা বা পর্বত।”১৩

 

তাই, সংসার সীমার ক্ষুদ্র ‘পথ’ ত্যাগ করে কবি অতীন্দ্রিয় জগৎ পথে; বৃহত্তর ‘পথে’ পাড়ি জমাতে উদগ্রীব হয়ে উঠে ছিলেন।

          এভাবে, কবি তাঁর সাধনাকে পথের ধুলোয় নিয়ে এসেছেন। কবি হৃদয়ের অপরিপূর্ণতার যে বেদনা, সেই দুঃখ-কষ্টকে পথের ধুলোয় বিলিয়ে দিয়ে অন্তরে তৃপ্তি লাভ করেছেন। পথের ধুলোয় একান্তভাবে নিজেকে সমর্পণ করে তোলার প্রার্থনা যেমন রয়েছে; তেমনি কবির ঐ ‘পথ চাওয়াতেই আনন্দ!’ পথের পানে চেয়ে থেকে দীর্ঘ প্রতীক্ষার সাধনায় ঐ পথকেই ঈশ্বর রূপী সাধনার ধন করে তুলেছেন। তাই, কবির কাছে ঈশ্বরের সাধনা আর ঐ ‘পথে’র সাধনা দুই-ই সমান।

প্রভু তোমার লাগি আঁখি জাগে;

দেখা নাই পাই,

পথ চাই,

সেও মনে ভালো লাগে।”১৪

কবির কাব্য জীবনে এভাবে পথ চলার মধ্যে রয়েছে কৈশোরের উদ্দামতা, যৌবনের উচ্ছলতা আর ঐ যৌবনের শেষ রক্তরাগে আধ্যাত্মিক চেতনার ভগবৎ অন্বেষাময় উপলব্ধির বিচিত্রতা। কবির ঐ অতীন্দ্রিয় জগৎ পথের অন্বেষণের উদ্দেশ্যগুলি হল –

ক।      ভগবানকে পাওয়ার লক্ষ্যে অভিসার।

খ।       দুঃখ-বেদনার কণ্টকাকীর্ণ ‘পথ’ মাড়িয়ে ভগবৎ উপলব্ধি হেতু যাত্রা।

গ।       প্রকৃতি ও মানব জীবনের বিচিত্র লীলারস উপলব্ধির মধ্য দিয়ে সৌন্দর্য রস-সম্ভোগের উদ্দেশ্যে যাত্রা।

ঘ।       সীমা-অসীমের লীলা দ্বন্দ্বে যাত্রা।

ঙ।       প্রেমের স্বরূপ উপলব্ধির পথে যাত্রা।

চ।       জগৎ ও জীবনকে জানবার অনন্ত কৌতূহল নিয়ে মৃত্যুর রহস্য উপলব্ধি পথে যাত্রা।

ছ।       মৃত্যুহীন জ্যোতির্ময় লোকে, আধ্যাত্মলোকে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে যাত্রা।

অতীন্দ্র জগৎ পথে কবির প্রেম সাধনাই ঈশ্বর সাধনার নামান্তর। যেমন করে বৈষ্ণবীয় সাধকগণ ঐ প্রেমেরই পথে, অতীন্দ্রিয় জগৎ পথে ঈশ্বরের অন্বেষণ করে ফিরেছেন। শ্রী চৈতন্য থেকে বুদ্ধদেব, নানক, হজরত মহম্মদ ও লাল ফকিরের মতো সকল শ্রেণীর মানব প্রেমী সাধক গণ প্রেমের পথে, মানব কল্যাণের পথে ডাক দিয়েছেন। কারণ জীবন থেকে সবকিছু হারিয়ে গেলেও শেষ সম্বল হিসেবে প্রেমের পরশটুকু থেকে যায়। ‘মানসী’ পর্বে কবি তাই সত্যিকারের প্রেমের পথ অন্বেষণ করে ফিরেছেন। প্রেমের অপ্রতিরোধ্য দুর্বার গতি যা, যৌবনের রক্তরাগে রঞ্জিত। কিন্তু, সেই প্রেম তার চলার পথে বাধা পেয়ে চোখের জলে ভাসিয়ে নিয়ে চলে। মর্ত্য-মানব সংসারের প্রেমে প্রত্যাঘাত কবি তাই বিরহ বেদনায় আক্ষেপ করে বলেন –

“কেন ঊর্ধ্বে চেয়ে কাঁদে রুদ্ধ মনোরথ,

কেন প্রেম আপনার নাহি পায় পথ?”১৫

কবি তাই মানস প্রিয়ার অন্বেষণে যেমন প্রেমের পথে অভিসারের উদ্দেশ্যে নিরুদ্দেশ যাত্রা করেন; তেমনি পরম কল্যাণময় ঈশ্বরের অন্বেষণেও পাড়ি জমান অতীন্দ্রিয় জগৎ পথে। আসলে, তিনি দেহের সীমাকে নিয়ে যান দেহাতীতে। রূপকে নিয়ে যান, রূপাতীতে। সীমার মাঝেই যেমন অসীমের উপস্থিতি অনুভব করেন; তেমনি ইন্দ্রিয়ের মধ্যে অতীন্দ্রিয় জগতের উপস্থিতি অনুভব করেন। ইংরেজ কবি শেলীর কাব্যের মূল সুরও ঐ অতীন্দ্রিয়ানুভূতি; যা রবীন্দ্র কবিতায় স্পষ্ট রূপে প্রতিভাত হয়ে উঠেছে। রবীন্দ্র-চিন্তায় প্রতিভাত অতীন্দ্রিয় জগৎ পথ হল, ধরণীর ধূলিকণার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক যুক্ত মানব জীবনেরই চলার পথ। যে ‘পথ’ পা’য়ে পা’য়ে চলার ছন্দে জেগে ওঠে। মানব প্রকৃতিও বিশ্বপ্রকৃতির অচ্ছেদ্য বন্ধন সূত্রেই অতীন্দ্রিয় জগৎ পথ রূপায়িত হয়েছে। বিশিষ্ট রবীন্দ্র সমালোচকের  মতে –

“বিশ্ব প্রকৃতির সহিত এই নিগূঢ় পরিচয়, এই নিবিড় আত্মীয়তা রবীন্দ্রনাথের রোমান্টিসিজিমকে এক বিশিষ্ট স্বতন্ত্রতার রূপ দিয়াছে। প্রকৃতির সহিত আপন অন্তরের অখণ্ড যোগ সূত্রের অস্তিত্বজ্ঞানের মধ্যে এক সূক্ষ্ম আনন্দরস আছে – সেই আনন্দের সন্ধানেই রবীন্দ্রনাথের কবি প্রাণ এক অতীন্দ্রিয়লোকে প্রয়াণ করিয়াছে।”১৬

          এই অতীন্দ্রিয় জগৎ-পথ সম্পর্কিত রবীন্দ্র-প্রত্যয়ের শেষ নেই। নেই পথেরও শেষপায়ে-পায়ে চলার গতিতেই ‘পথ’ পায় গতি। কবির তাই সতৃষ্ণ প্রশ্ন থেকে গেছে ‘পথের শেষ কোথায়? শেষ নাহি যে!’ চলার অবিরাম গতিতে ‘পথ’ কখনো ফুরোয় না। এই অতীন্দ্রিয় জগৎ পথের তত্ত্বগত ভাবনা, পথের ব্যঞ্জনা, পথ ও পথিকের রহস্য জানবারও নেই শেষ।।

 

তথ্যসূত্র:

১।       বৈষ্ণব পদাবলী – অধ্যাপক শ্রী অরুণকুমার বসু ও অধ্যাপক শ্রী মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায় (ভূমিকা ও সম্পাদনা), প্রজ্ঞাবিকাশ, কলকাতা – ০৯, পুনর্মুদ্রণ: আগস্ট ২০১৬, পৃ. – ১৭৩।

২।       তদেব, পৃ. – ১৯৩।

৩।      রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা – ১৬, পুনর্মুদ্রণ : চৈত্র – ১৩৭৯, পৃ. – ১৫৬।

৪।      তদেব,  পৃ. – ১২৫।

৫।      ‘মুক্তধারা’ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা – ১৭, পুনর্মুদ্রণ : ভাদ্র ১৪০২, পৃ. – ৩৩।

৬।       রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রাগুক্ত, পৃ. – ২৭৫।

৭।      তদেব, পৃ. – ২৮২।

৮।      তদেব, পৃ. – ২৮৩। 

৯।       তদেব, পৃ. – ২৮৫।

১০।     রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) – শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার সুলভ সংস্করণ, কলকাতা, প্রকাশ : অগ্রহায়ণ – ১৩৯০, পৃ. – ১৯৭।

১১।     তদেব, পৃ. – ৩৬৭।

১২।     রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রাগুক্ত, পৃ. – ৯৩

১৩।     রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) – শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রাগুক্ত, পৃ. –৭১৮।

১৪।     রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রাগুক্ত, পৃ. – ২৫।

১৫।     ‘সঞ্চিতা’ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পূর্ণ প্রকাশন, কলকাতা – ০৯, প্রথম প্রকাশ : (পূর্ণ) জানুয়ারী – ২০০২, পৃ. – ১০৩-১০৪।

১৬।     রবি-রশ্মি (প্রথম খণ্ড) – চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, ১৩৭৩, পৃ. – ৫০।

 

 

 

 

 

 

       

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন