দুই বাংলার সাম্প্রতিক দুই কবির কাব্যকৃতি : আল মাহমুদ ও ভবেশ বসু - ড. চঞ্চল কুমার মণ্ডল
“দুই
বাংলার সাম্প্রতিক দুই কবির কাব্যকৃতি : আল মাহমুদ ও ভবেশ বসু
- ড. চঞ্চল কুমার মণ্ডল
[১]
বাংলাদেশের
এক জনপ্রিয় কবি হলেন, আল মাহমুদ। যাঁর কাব্য চেতনায় ভিড় জমিয়েছে আধুনিক জীবনবোধ, এমনকি,
নাগরিক জীবন অনুষঙ্গও। আবার, গ্রামীণ অনুষঙ্গগুলি তাঁর কবিমন থেকে একেবারে হারিয়ে যায়নি।
আধুনিক জীবন-যন্ত্রণায় অতিষ্ট কবি বার বার ফিরে যেতে চান গ্রামীণ সুখ ও ফেলে আসা সেই
শান্তির নীড়ে। যুগযন্ত্রণায় অতিষ্ট কবি কষ্টের সঙ্গে উচ্চারণ করেন, -
“দারুণ আহত বটে আর্ত আজ শিরা উপশিরা।”
[কাব্যগ্রন্থ : ‘সোনালি কাবিন’]
![]() |
আল মাহমুদ |
“কখন যে কোন মেয়ে বলেছিলো হেসে;
নাবিক তোমার হৃদয় আমাকে দাও,
জলদস্যুর জাহাজে যেয়ো না ভেসে
নুন ভরা দেহে আমাকে জাগিয়ে নাও।”
[‘সমুদ্র
নিষাদ’]
এই ‘নুনভরা’ তথা,
নোনা ঘামে সিক্ত মানব দেহের প্রতি কবির প্রেম ও শ্রদ্ধা বার-বার বর্ষিত হয়েছে।
[২]
এপার বাংলার সাম্প্রতিক কবি ভবেশ বসুর কাব্যেও
সেই মানব প্রেমের সুর, কবির স্বতন্ত্র ভাবনায় ফুটে উঠেছে অতি চমৎকার নাটকীয় কৌশলে।
মানুষের কান্নাকে কবি ভবেশ বসু মানুষের বুকে যেন কান পেতে স্পষ্ট অনুভব করেন। ‘মানব
অশ্রু’ (২০১৬) কাব্যগ্রন্থের কবি ভাবনাই তার জ্বলন্ত প্রমাণ। কবির প্রায় কবিতায় খুঁজে
পাওয়া যায় এক প্রকট দৃশ্যপট। রক্ত-মাংসের নারী-পুরুষের ছবি আঁকায় তিনি সিদ্ধহস্ত কবি।
মানুষের মাঝেই কবি ঈশ্বর খুঁজে ফেরেন। কিন্তু, কবি লক্ষ্য করেন অসহায় নারী-পুরুষ অশ্রুফোঁটা
গড়িয়ে খুঁজে ফিরেছে তাদের ঈশ্বর।
“এক নারী এক পুরুষ
সেই থেকে ছাই স্তুপে বসেছে
হাতড়ে হাড়তে বার
করে আনছে অশ্রু ফোঁটা
এভাবে কি সম্ভব ঈশ্বর
খোঁজা?”
[‘মানব অশ্রু’]
![]() |
ভবেশ বসু |
কবি লক্ষ্য করেন মানুষের মধ্যে প্রচণ্ডরকম ভাঙন। যে ভাঙনের ফলে –
“হাঁড়ির
ভাত ভাগ হয়
আগুন
প্রদীপের মতো এক হাত অন্তর
এক
শ্মশানের পৃথক পৃথক বর্ষণ করে বন্ধুরা।”
[‘বেহুলা’ / ‘লাশ সাঁতার’]
কবির
এই সাম্প্রতিক ‘লাশ সাঁতার’ (২০১৮) কাব্য গ্রন্থে অনেক পুরাণ অনুষঙ্গ আধুনি জীবন ভাবনার
আলোকে স্থান করে নিয়েছে। এই কাব্যগ্রন্থের কবিতা – ‘কংস’, ‘ভগীরথ’, ‘ইন্দ্রসভা’, ‘বেহুলা’-র
মতো কবিতায় পুরাণের বিন্দুমাত্র ছায়া নেই। আছে কেবল আধুনিক জীবন জিজ্ঞাসারই প্রতিফলন।
কবি ভবেশ বসু তাঁর কবিতায় শব্দ চয়ন ও কাব্য শরীরের
গঠন বিন্যাসে মৌলিকতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর কাব্য শরীরের ছত্রে-ছত্রে চিত্রের পর
চিত্র দৃশ্য থেকে দৃশ্যায়িত হয়ে উঠেছে। এই দুই বঙ্গের সাম্প্রতিক দুই কবির কাব্য চেতনার
মর্মমূলে মানব ভাবনাই ভিড় জমিয়েছে। সমাজভাবনা ও মানব প্রেমই উভয় কবির কাব্যকৃতির মূল
সুর।